জাতীয় নাগরিক কমিটি ট্রেইনি ডাক্তার পরিবারের মাসিক বাজেট করে দেখাবে কি? 

দেশের তরুণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির গোটা প্রক্রিয়ার সর্বাঙ্গে ব্যাথা

পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তারদের অত্যন্ত যৌক্তিক এবং ন্যায্য একটি আন্দোলনকে জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) যেভাবে “যুক্তিযুক্ত নয়”, “হঠকারী”, “সরকারকে বিব্রত করবার চেষ্টা” হিসাবে অভিহিত করেছে, তা বিস্ময়কর ও লজ্জাজনক।গভীর পরিতাপের বিষয় যে, জানাক মুখপাত্র সামান্থা শারমিন স্বাক্ষরিত ২৯ ডিসেম্বরের বার্তায় ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধির দাবীকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। জানাক কি আজকের বাজার দরে দু-একটি শিশু সন্তান এবং বাবা-মা নিয়ে চলা ঢাকাবাসী একটা পরিবারের মাসিক বাজেট তৈরি করে দেখাতে পারবে?

পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের প্রতি বৈষম্য এবং আমলা, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে গত সপ্তাহে প্রবাসী সংহতির লাইভ আলাপে আমরা তিনজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের কাছ থেকে যা জানলাম, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, দেশের তরুণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির গোটা প্রক্রিয়ার সর্বাঙ্গে ব্যাথা। এর প্রথম ও প্রধান ধাপ হল ট্রেইনি ডাক্তারদের ন্যূনতম ভদ্র একটা জীবনযাপন করবার উপযোগী ভাতা দিতে অস্বীকার করা।

বিগত ১৪ই ডিসেম্বর থেকে আমরা পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তারদের ভাতা ৫০,০০০ টাকায় এ উন্নীত করা এবং নবম গ্রেড দেয়ার দাবীতে আন্দোলন করতে দেখেছি।এই  দাবিতে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে মশাল মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস নামের সংগঠনটি। গত দুই বছর ধরে এই দাবী করে আসলেও তাদের মাত্র ২৫,০০০ টাকা ভাতা হিসাবে দেয়া হচ্ছিল।  অথচ, ইমারজেন্সির সময় সপ্তাহে  ৭০ ঘণ্টা করেও অমানুষিক পরিশ্রম তাদের করতে হচ্ছে, যেখানে শ্রম আইনের এই সীমা ৪৮ ঘণ্টার। ভাতা বাড়াতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময় পার হলে  ২২ তারিখ থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন।এরপর সরকার মাত্র ৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০,০০০ টাকা ভাতার ঘোষণা দেন। ৩০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে জারী করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে আসছে নতুন বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ট্রেইনি চিকিৎসকরা মাসে ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। আর এ বছরের জুলাই মাস থেকে তাদের ভাতা হবে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু ট্রেইনি ডাক্তাররা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে প্রথমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে আবার তাঁরা কাজে যোগ দেন। দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকের জীবনমানের উন্নয়নের সাথে ভালো চিকিৎসাসেবার পরিকাঠামো তৈরির প্রশ্ন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তাররা হলেন তাঁরা, যারা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পাশ করে ইন্টার্ন শেষ করে বিশেষজ্ঞতা লাভ করার জন্যে উচ্চতর পড়াশোনা করেন, যেখানে তাদের রেসিডেন্ট ডাক্তার হিসাবে প্রত্যক্ষভাবে কোন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে হাতে কলমে দক্ষতা অর্জন করতে হয়।  

এই তরুণ ডাক্তারদের দাবী ছিলঃ 

১। পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার এ উন্নীতকরণ ও নিয়মিতভাবে ভাতা  প্রদান।

২। FCPS, RESIDENT, NON-RESIDENT ডাক্তারদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ।

৩। BSMMU এর অধীনে ১২ টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের RESIDENT এবং NON-RESIDENT ডাক্তারদের ভাতা পুনরায় চালু এবং বকেয়া ভাতা পরিশোধ।

৪। স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন চালু ও বাস্তবায়ন। 

আমরা এই আমলেও যেভাবে ডাক্তারদের এই ন্যায্য দাবীকে অগ্রাহ্য হতে দেখলাম, তাতে ভারতীয় ডাক্তারদের খপ্পর থেকে আমাদের চিকিৎসা সেবাকে উদ্ধার করে দেশীয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সৃষ্টির করবার কোন নিয়ত সরকারের আছে বলে মনে করা যায় কি?দেশের ট্রেইনি ডাক্তারদের স্বার্থরক্ষা আমাদের গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নেরই সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ডাক্তারদের দেখভাল না করে আমাদের নিজেদের চিকিৎসার মান উন্নয়নের চিন্তা অবাস্তব। আশা করি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন এবং যৌক্তিক দাবী মেটানোর জন্যে তাদের বারে বারে পথে নামতে বাধ্য করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *